নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ চিকিৎসার নামে কয়েকটি ক্লিনিকে সরকারী বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক, ব্রাদার, নার্স, এমএলএসএস ছাড়াও প্রতিটি হাসপাতালের সরকারী বেসরকারী অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারদের ম্যানেজ করে রোগী ভাগিয়ে রমরমা নগ্নকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
আর এই নগ্নকান্ডের সকল অপকর্ম খোদ নারায়ণগঞ্জ জেলা জেলা সিভিল সার্জন দপ্তর প্রতারণার আখড়াখ্যাত নারায়ণগঞ্জের সকল ক্লিনিকগুলোতে রন্দ্রে রন্দ্রে চলমান প্রতারণার সকল তথ্য জানা থাকলেও নিয়মিত মাসোয়ারা আর বিশেষ বিশেষ উপঠৌকন লেনদেনের কারণে কেউ আর এই প্রতারণার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা কোন খোজ খবর ও নেন না। এভাবেই চলছে বেসরকারী সকল হাসপাতাল, ক্লিনিক আর ডায়াগণস্টিক সেন্টার ।
একজন রোগী চিকিৎসার জন্য দিগ্বিগিক হয়ে যে কোন সরকারী হাসপাতালে আসার পর তাকে চিকিৎসার পরিবর্তে কি করে বাণিজ্য কার যায় সেই হিসেবে করে রোগীর অর্থনৈতিক সামর্থ চিন্তা করে। এরপর পাঠানো হয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে। ডায়রিয়া রোগীকেও চিকিৎসার পূর্বেই এইচবিএসএসজি, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ নানান পরীক্ষা করতে নিজের কক্ষে থাকা দালাল দিয়ে পাঠানো হয় হাসপাতালের বাইরের ডায়াগণস্টিক সেন্টারে । কেউ এমন পরীক্ষা নিরীক্ষা এই মুহূর্তে প্রয়োজন কি এমন প্রশ্ন করলেই “ডাক্তার আপনি নাকি আমি ? চিকিৎসা তাইলে আপনিই করেন ! যান রোগী নিয়ে ঢাকা যান এখানে চিকিৎসা হবে না ! রেফার্ড করে দেয়া হলো !” এমন কর্মকান্ড প্রতিদিনের ।
এ যেন নচিকাতার “ডাক্তার মানে সে তো মানুষ নয় || ও ডাক্তার” এমন গাণের কথা মনে করেও অসহায়ের মতো ঘুরতে হয় সর্বত্র।
এমন হয়রানীর পর কোন অসুস্থ্য রোগীকে নিয়ে সাইনবোর্ড এলাকার বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আনার সাথে সাথেই ওই অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে দেয়া হয় নগদ ১ (এক) হাজার টাকা । এরপর কে পাঠালো এই রোগীকে তার বিকাশ – নগদ একাউন্টে নানান হিসেবে পাঠানো হয় দালালীর অর্থ ।
এভাবেইু বিরামহীনভাবে চলছে চিকিৎসার নামে অপকর্ম ।
যার পরিপ্রেক্ষিতে আবারো সিদ্ধিরগঞ্জে বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
পরিবারের দাবি, শিশুটির মৃত্যুর দু’ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানায় নাই । উল্টো মৃত্যুর খবর গোপন রেখে জোরপূর্বক ডেথ সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা করেছে।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সাইনবোর্ডের বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত নবজাতকের বাবার নাম লিমন। তিনি ৯নং ওয়ার্ডের জালকুড়ি এলাকার শহীদ মালেকের বাড়ির ভাড়াটিয়া।
শিশুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ওই নবজাতক ৬ দিন আগে যাত্রাবাড়ীর ডেল্টা হাসপাতালে জন্ম গ্রহণ করে। এরপর থেকে সেখানে চিকিৎসাধীন ছিল। গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে শিশুটির অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকলে তাৎক্ষণিক সাইনবোর্ডের বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাচ্চাটির অবস্থার অবনতি দেখে আইসিইউতে পাঠায়। শনিবার দুপুরের পর মৃত্যু হলেও পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়নি। বরং চিকিৎসা চলমান আছে বলা হয়েছিল।
নব জাতকের বাবার বন্ধু জালকুড়ি মসজিদের মোয়াজ্জেম মো. হারিস মিয়া জানান, গতকাল নবজাতককে ভর্তি করানোর পরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় পূর্বের হাসপাতালের কোনো টেস্ট কাজে লাগবে না। এখানে আবারো সবগুলো টেস্ট করানো লাগবে। আমরা বাধ্য হয়ে তাদের কথা অনুযায়ী সকল টেস্ট করিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এরপর শনিবার দুপুরেও ডাক্তার আমাদেরকে দিয়ে কিছু ওষুধ কিনিয়েছেন। অথচ তখন বাচ্চাটি মৃত্যুবরণ করেছে।
তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে মৃত্যুর খবর গোপন রাখে। এরপর যখন আমরা বাচ্চার সম্পর্কে ডাক্তারের কাছে জানতে চাই তখন ডাক্তার আমাদের বলে বাচ্চার অবস্থা ভালো না। তার মুখের অক্সিজেন খুললে দু’ঘণ্টার মধ্যে মারা যাবে। তখন আমি তাকে বললাম তাহলে বাচ্চাকে ছেড়ে দিন, আমরা অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাই। এরপর ডাক্তার আমাদের বলতে লাগলেন হাসপাতাল থেকে বের করতে হলে ডেথ সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করে নিয়ে যেতে হবে। না হয় দেওয়া সম্ভব না।
ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালের অ্যাডমিন (জিএম) নুরুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভুল চিকিৎসার বিষয়টি ডাক্তার বলতে পারবেন। আমি এটা বলতে পারছি না। আর এখানে ভুল চিকিৎসার কোনো সুযোগ নেই। কারণ অভিজ্ঞ ডাক্তাররা চিকিৎসা দেন।
মৃত্যুর দু’ঘণ্টা পরও জীবিত আছে বলে পরিবারকে জানানো হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এমন কোনো কথা শুনিনি। আমার জানা মতে শিশুটিকে আজ দুপুরে ভর্তি করানো হয়েছে। তাহলে এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনাই নেই।