পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারের দুদিনের ইফতারে যে পরিমাণ কাঁচাবাজার লাগে তা পাওয়া যাবে মাত্র ১৫০ টাকায়। ১৫০ টাকার প্যাকেজে রয়েছে এক কেজি শশা, ৫০০ গ্রাম বেগুন, এক হালি লেবু, এক কেজি পেঁয়াজ, ৩০০ গ্রাম কাঁচা মরিচ, ৫০০ গ্রাম টমেটো, এক কেজি আলু এবং আধা কেজি গাজর। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারে একটি প্যাকেজের আওতায় মিলবে এসব পণ্য।
মঙ্গলবার (৭ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রমজান উপলক্ষে পরিমিত ক্রয় ক্যাম্পেইন প্রোগ্রাম-২০১৯ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ও ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতি যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১৫০ টাকা দিয়ে প্যাকেজ কিনে এর বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।চাঁদাবাজমুক্ত পরিবেশে সবাইকে ব্যবসা করার আশ্বাস দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘কোথাও কোনও ধরনের চাঁদাবাজি হলে আমাদের জানান, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা চাই চাঁদাবাজমুক্ত পরিবেশে সবাই ব্যবসা করবেন, ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের পণ্য কিনবেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এক সময় রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় প্রায় সময়ই মানুষ খুন হতো, ব্যবসায়ীরা শান্তিতে ব্যবসা করতে পারতেন না। আজ ব্যবসায় শান্তি ফিরে এসেছে, ক্রেতার টাকাও ছিনতাই হয় না।’
তবে সেই সমস্যা পুরোপুরি নির্মূল হয়নি বলেও জানান তিনি। আর এ জন্য ব্যবসায়ীদের ব্যর্থতাকে দায়ী করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা (ব্যবসায়ী) যদি প্রশাসনকে না জানান তাহলে কিভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোথাও কোনো ধরনের চাঁদাবাজি হলে একবার সাহস করে আমাদের জানান, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনও ধরনের চাঁদাবাজকে আমরা প্রশ্রয় দেবো না। সর্বদা সব জায়গায় শান্তি থাকবে, এটাই সরকারের প্রত্যাশা।
অনুষ্ঠানে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, ‘খাদ্যে যারা ভেজাল মেশায় তারা খুনি। এদের ফাঁসি দিতে হবে।’ এ জন্য আইনের সংস্কারও চেয়েছেন তিনি।
র্যাব মহাপরিচালক ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কারও ঘাড়ে কোনও অভিযোগ দেবেন না। কোথাও অন্যায্য কিছু হলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। খাদ্যে ভেজাল মেশালে তাদের ফাঁসির সাজা হওয়া উচিত। ব্যবসায়ীরা কাউকে চাঁদা দেবেন না। সৎ ব্যবসায়ীর সঙ্গে আমরা আছি। অসৎ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা নেই। সৎ ব্যবসায়ীরা কোনও ভয় পাবেন না।’
এসময় উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বেনজির আহমেদ বলেন, ‘পণ্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে ইনভয়েস প্রথা চালু করুন। এটা চালু না করলে শুভঙ্করের ফাঁকি থেকে বের হতে পারবো না।’
র্যাব প্রধান বলেন, ‘কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর জন্য বাজারে মূল্য বাড়ছে। এই অংশকে আমরা সার্জারি করে আলাদা করে দেব। এদেরকে অপারেশন করে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হবে। দরকার নেই এই অংশের। যারা ভেজাল করে তারা খুনি। খুন করলে যদি ফাঁসি হয়, যে খাদ্যে ভেজাল মেশায় তারও ফাঁসি হতে হবে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এই পরিমাণ কাঁচাবাজার একটি পাঁচ সদস্যের পরিবার অনায়াসে দুইদিন চালিয়ে নিতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘শুধু কারওয়ান বাজার নয়, সিটি করপোরেশনের ৪৩ টি মার্কেটেও এভাবে সবজি বিক্রি করা যেতে পারে। ৪৩ টি মার্কেটে কিভাবে এ ধরণের পণ্য বিক্রি করতে পারি তা নিয়ে আমি আলোচনা করবো। রমজান মাসজুড়ে আশা করি এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, কারওয়ান বাজার কাঁচাবাজারের সামনে এই প্যাকেজ বিক্রির জন্য একটি কর্নার করা হয়েছে। সেখান থেকেই ক্রেতারা এই প্যাকেজ সংগ্রহ করতে পারবেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- এফবিসিসিআই’র সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান প্রমুখ।