নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে

নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশেই এখন একদিকের রাজনীতি চলছে। যদিও এই জেলার পাঁচটি আসনের মাঝে দুটি আসনে জাতীয় পার্টির এমপিরা রয়েছেন, তার পরেও এখানে জাতীয় পার্টির আলাদা বা পৃথক কোনো সত্ত্বা নেই। বাস্তবতা হলো নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে সব কিছু। বিগত প্রায় এক যুগের অধিক সময় ধরে কার্যত আওয়ামী লীগই রয়েছে রাস্ট্র ক্ষমতায়। জাতীয় পার্টি হলো তাদের সহায়ক শক্তি। তাই আগামী দিনে এই এক যুগের ইতিহাস হবে আওয়ামী লীগেরই ইতিহাস। আর ভালো মন্দ যাই হোক ইতিহাস কখনো মিথ্যা বলে না। কাউকে ক্ষমাও করে না। আজ যা হচ্ছে সেটাই লিপিবদ্ধ হবে ইতিহাসে। তবে ইতিহাস যাই হোক না কেনো বাস্তবতা হলো আওয়ামী লীগের এখন স্বর্ণযুগ চলছে। এই দলের নেতাকর্মীরা সারা নারায়ণগঞ্জ জেলা নিয়ন্ত্রণ করছে। নানা প্রকারের রাজনৈতিক ব্যবসা বাণিজ্যও তাদেরই নিয়ন্ত্রণে। তাই এক শ্রেনীর আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। জাতীয় পার্টির দুই এমপিও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়েই পথ চলছেন। তবে বিএনপির কিছু জনপ্রতিনিধিও তাদের আনুকুল্য লাভ করতে সক্ষম হচ্ছেন। তবে তাদের সংখ্যা এখন হাতে গোনা তিন/চার জন। এক কথায় গোটা নারায়ণগঞ্জ জেলা বিগত এক যুগ ধরে আওয়ামী লীগেরই নিয়ন্ত্রণে। এখানে বিকল্প কিছু নেই। তাই শেষ পর্যন্ত এর পরিণতি কি হয় সেটা বুঝা যাবে আরো পরে।
এদিকে আওয়ামী লীগের বিগত এক যুগে বিভিন্ন এলাকায় কমবেশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তাঘাটের উন্নয়নও কম হয়নি। কিন্তু এসব উন্নয়ন মোটেও টেকসই বা পরিকল্পিত হচ্ছে না। বিশেষ করে পাঁচটি আসনের দুটি আসন হলো পূরোপূরি শহর এলাকা। এই দুটি আসন হলো নারায়ণগঞ্জ-৪ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। কিন্তু এসব আসনের অনেক এলাকায়ই নিয়মিত জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জে এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টি ছাড়াও বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসাবে অস্তিত্ব বজায় রেখেছে বিএনপি। আর বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠির স্বার্থ রক্ষায় মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছে বামপন্থী দলগুলি। যেমন কমিউনিস্ট পার্টি ফুটপাতে হকার বসাতে চাইছে। তারা নারায়ণগঞ্জ শহরের বৃহৎ জনগোষ্টির চলাচলের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে মাত্র শ খানিক মানুষ বা পরিবারের স্বার্থ রক্ষার জন্য। এ নিয়ে তারা এখন প্রায় প্রতিদিনই মিছিল সভা করছে। তাই এই শহরের অনেকে মনে করেন বামপন্থী দলগুলি যেমন রাজনৈতিক দল হিসাবে ক্ষুদ্র তেমনি তাদের মানষিকতাও ক্ষুদ্র। তাই তারা বৃহৎ জনগোষ্ঠির স্বার্থ না দেখে ক্ষুদ্র জনগোষ্টির স্বার্থই দেখছেন। তাই তাদের কাছে এই শহরের জনগন তেমন কিছু আশাও করেন না।
অপরদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের মতে, নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশেই এখন আর কোনো মানুষের কোনো অধিকার নেই। মানুষ আরো আগেই তাদের ভোটের অধিকার হারিয়েছে। হারিয়েছে কথা বলার অধিকারও। সংবাদপত্রগুলি হারিয়েছে তাদের লিখার স্বাধীনতা। তাই এই জেলায় যারা বিএনপি থেকে নির্বাচন করলেই এমপি হতে পারতেন তারাও নিস্ক্রিয় হয়ে পরেছেন। কারণ তারা জেনে গেছেন আপাতত আর সঠিক ভোট হচ্ছে না। তাই এই জেলায় এখন বিএনপির দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির নেতারা দলটির পক্ষ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় কিছুটা সক্রিয় রয়েছে।
ফলে এই সকল বিশ্লেষন থেকে একটি বিষয়ই পরিস্কার করে বলা যায়, ভালো হোক আর মন্দ হোক রাজনীতি এখন একদিকে। তবে সরকারী দলের লোকজন যাই বলুক না কেনো জনগনের মন তারা কতোটা জয় করতে পারছেন সেটা বলা যাচ্ছে না। কেনোনা সাধারন মানুষের সাথে কথা বললে এই একপেশে রাজনীতির পক্ষে কথা বলা মানুষের চেয়ে বিপক্ষে বলার মানুষই বেশি দেখা যাচ্ছে। তাই চলমান এই এক পেশে রাজনীতির ভবিষ্যৎ কি হয় সেটা বলা সম্ভব নয়। চলমান এই ধারা পরিবর্তনের আপাতত কোনো সম্ভাবনাও নেই। তাই বর্তমান এমপিদের এই শাসনামল ইতিহাসে কোন অবস্থানে থাকবে বলা যাচ্ছে না। কারন এখন উন্নয়ন যেমন হচ্ছে তেমনি ঘটছে নীতি নৈতিকতার অধ:পতনও।