বিএনপির ভ্যানগার্ড খ্যাত জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে অভ্যন্তরীন কোন্দল। সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম সজীবকে কে›ন্দ্র করে নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। বিভক্তির প্রমাণ মিলেছে বিভিন্ন কর্মসূচীতে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদকের আলাদা আলাদা ভাবে কর্মসূচী পালন করাকে কেন্দ্র করে। দীর্ঘদিন যাবৎ ক্ষমতায় নেই বিএনপি। টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। বিএনপি বেশ কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। তার উপরে নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে দলীয় কোন্দল ও বিভক্তি। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি এবং সাধারন সম্পাদক খায়রুল ইসলাম সজীবের আলাদা আলাদা ভাবে শো-ডাউনের মাধ্যমে জেলা ছাত্রদলের অন্ত কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে। এর আগে মশিউর রহমান রনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদকের জন্য প্রতিদ্ধন্ধিতা করাকালীন সময়েও পাশে দেখা যায়নি নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলের কোন নেতা কর্মীকেই। তবে রনির অনুগত কিছু নেতাকর্মী সে সময় তার সাথে ছিলেন।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা কিংবা কোন থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দলীয় পদ পদবি না দিয়ে সারাদেশ সফর শুরু করে হঠাৎ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করতে মাঠে নামেন মশিউর রনি। তবে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। এসময় কেন্দ্রীয় নির্বাচনে ১০ শতাংশেরও কম ভোট অর্থাৎ মাত্র ৯ ভোট পেয়ে পরাজিত হন রনি। নিয়ম অনুযায়ী মোট কাস্টিং ভোটের ১০ শতাংশ ভোট না পেলে উক্ত প্রার্থী কেন্দ্রীয় আর কোন পদে আসতে পারবেন না। এদিকে দলের নির্বাচিত কমিটি সকালে দলের প্রতিষ্ঠাতার মাজারে ফুল দিতে গেলেও নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের প্রায় সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম সজীব ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সঙ্গী হয়ে সেখানে উপস্থিত হন। অনেকেই আলাদাভাবে সেখানে শো-ডাউন করেন তবে কোন থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এদিন রনির পাশে তেমন দেখা যায়নি। তবে মশিউর রহমান রনির অনুগত কিছু নেতাকর্মীকে দেখা গেছে রনির পাশে যারা তাকে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
আরো জানা যায়, জেলা ছাত্রদলের কমিটি নিজস্ব কোন্দল ও একক আধিপত্য রাখতে গিয়ে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। নিজেরা নিজেরাই কমিটি নিয়ে একাধিকবার জড়িয়ে পড়েন দ্বন্ধ। এ নিয়ে কমিটির বাকি নেতারা অনেক বার চেষ্টা করেও নেতাদের এক করতে সফল হননি। আর জেলা ছাত্রদলের অধীনস্থ থানা ছাত্রদলের কমিটিতে জেলার পদে থাকা কয়েকজন নেতাকে থানা কমিটিতেও পদায়ীত করা হয়। এ নিয়ে থানা কমিটিগুলোর নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এর এক পর্যায়ে ৫টি থানার ছাত্রদলের নেতারা জেলা কমিটিকে আল্টিমেটাম দেয়ার সিদ্ধান্তে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করা হয়েছে। ১৬ মে রাতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দপ্তরে ওই চিঠি পৌঁছে দেন নেতারা।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ১৮ থেকে ১৯ বছরের থানা কমিটির বন্ধ্যাত্ব না শেষ না করে জেলা ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের একাধিক পদের উচ্চ লালসা ও থানা কমিটি গঠনে চরম অনীহা আমরা পাঁচটি থানা ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মোটেও ভালো চোখে দেখছি না। থানা ও ইউনিট কমিটিগুলো গঠন না করে জেলা ছাত্রদলের পদধারী নেতারা আবার নেতা হওয়ার চরম লজ্জাজনক ও ঘৃণিত গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। জেলার শীর্ষ দুই নেতা ইতোমধ্যে জেলা বিএনপির দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ যথাক্রমে জেলা ছাত্রদলের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক পদ দুটি তাদের দখলে নিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা। এই লক্ষ্যে দেশ বিদেশে জোরালো লবিংও করছেন তারা। তৃণমূলকে সাংগঠনিকভাবে পরিচয়হীন রেখে তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার উচ্চবিলাসী মনোভাব ও চরম স্বেচ্ছাচারিতা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। এমন অদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা নিম্ন স্বাক্ষরিত নারায়ণগঞ্জ জেলার অধীনস্থ ৫ টি থানা ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উল্লেখিত সিদ্ধান্তসমূহ ঐক্যমতে পৌঁছেছি। এই অবস্থায় জেলার রাজনীতিতে যখন ব্যর্থতার তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছিল তখন জেলা ছেড়ে কেন্দ্রের পদ হাসিলের মিশনে নামেন এই নেতা। সেখানেও ব্যর্থ হয়ে প্যাবিলিয়ানে ফিরে আসেন। এতে করে জেলা ও থানা কমিটিতেও এখন মুখ লুকিয়ে চলছেন। কারণ বড় মুখ করে জেলার ও থানা কমিটির দ্বন্ধকে জিইয়ে রেখে কেন্দ্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। এখন সেখানে ব্যর্থ হওয়ার পরে তিনি আরো সমালোচিত হচ্ছেন। এই অবস্থায় দলের নেতাকর্মীরা দু’ভাবে বিভক্ত হয়ে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করছেন। এতে করে বিভক্তির দেয়ালটা আরো বিরাটাকার ধারণ করছে।