১৩ সেপ্টেম্বর রাতে ফতুল্লার বক্তাবলী ঘাটে অটো রিকশা ছিনতাইকারীদের উপ-জুপুরি ছুরিকাঘাতে নিহত হন বেলাল মিয়া নামে এক ব্যাক্তি। এ সময় অটোরিকশা নিয়ে ছিনতাইকারী চক্র পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় পুলিশের কাছে আটক হন ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা। গত ১০ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের ইস্পাহানি ঘাট এলাকায় দুটি কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষের সময় পানিতে ডুবে নিহত হয় কদম রসুল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র মিনহাজুল ইসলাম মিহাদ ও তার বন্ধু বিএম ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র জিসান আহম্মেদ। এর আগে ১ আগস্ট সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় আহাদ আলম শুভ মিয়া নামের এক যুবককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, এর পেছনে রয়েছে একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। গত ১ এপ্রিল ফতুল্লার দেওভোগ আদর্শনগরে শরিফ হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী দুবৃর্ত্তদের হামলায় নিহত হন। তাঁর পরিবারের দাবি, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। স¤প্রতি নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত এই চার হত্যাকান্ড কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। নগরবাসী বলছে, কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকান্ডে তারা আতঙ্কিত। ক্রমেই তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় কিশোররা নিজেদের শক্তি ও অস্তিত্ব জানান দিতে গড়ে তুলছে নতুন নতুন গ্রæপ। কিছু গ্রæপের নাম থাকলেও, অন্যগুলো নামহীন। কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে অভিভাবকরা যেমন উদ্বিগ্ন, তেমনি প্রশাসনকেও বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। পুলিশ প্রশাসন বলছে, কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা রোধ করতে অভিভাবক, সুধীসমাজ, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরসহ সবাইকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।
সম্প্রতি ফতুল্লা মডেল থানায় অনুষ্ঠিত ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠানে নারায়ণঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রনে অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে। ইতিমধ্যে জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে কিশোরদের গতিবিধি পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে। অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক উঠতি বয়সের যুবকদের কারন ছাড়া অহেতুক ঘোরাফেরা নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসা হবে। নির্ভরযোগ্য কারন ছাড়া অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক কিশোরদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও তিনি জানান।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু বলেন, এদের শাসন করতে গিয়ে আমরাও অনেক সময় বিব্রত বোধ করি। পঞ্চায়েতের মাতবররাও বিভিন্ন সময়ে লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। বয়স দেখলে বোঝার উপায় নেই এদের সংঘটিত অপরাধ কত ভয়ংকর!
স¤প্রতি সংঘটিত কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করে শকু বলেন, অনেক সময় পরিবারের লোকজনের আশকারাও পাচ্ছে তারা। নিজের এলাকা খানপুর হাসপাতালের সামনের সড়কে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত ও বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রশাসনকে এখনই এদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে হবে। আমরাও তাদের পাশে থাকব।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মোড়ে মোড়ে জটলা পাকিয়ে শক্তি প্রদর্শন করা, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল দাবড়িয়ে বেড়ানো, ইভ টিজিং এদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এদের দমন করতে না পারলে ভবিষ্যতে এই গ্যাং বড় সন্ত্রাসী হয়ে উঠবে। এদের রুখতে হলে বা সংশোধন করতে হলে প্রশাসনকে ও তাদের অভিভাবকদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে চরম মূল্য দিতে হবে। গত ১৯ আগস্ট ফতুল্লার পাগলা বালুঘাট এলাকায় এক পোশাক শ্রমিক সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচ কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, গত ২০ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে দেশে তৈরি অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব-১১। সুধীসমাজের প্রতিনিধি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, কিশোর অপরাধ এক দিনে বাড়েনি। পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয়, সন্তানদের আবেগ-অনুভূতি অনুধাবন না করা, সময় না দেওয়া, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, অনুশাসন মেনে না চলা, ক্ষমতা দেখানোর প্রবণতা, এলাকায় প্রভাব বিস্তার, রাজনীতিবিদদের প্রত্যক্ষ শেল্টার থাকা, মাদক, ইভ টিজিং, মেয়ে ঘটিত বিষয়, মাত্রাতিরিক্ত সময় ধরে ভার্চুয়াল জগতে পড়ে থাকাসহ সার্বিক অসচেতনতার কারণে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেড়েছে।